অচিন পাখি ~শক্তিপদ রাজগুরু

 

          অচিন পাখি

                                      

"মানুষ পৃথিবীতে যখন আসে তখন তার মনে অনেক আশা ,স্বপ্ন । সে কামনা-বাসনা নিয়ে বাঁচে । সে স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করতে চায় । সে নিজের ঘর গড়তে চায় । সুখ দুঃখের একটা ঘর । ভালোবাসা পেতে চায় । ভালবেসে ধন্য হতে চায়, সুখী হতে চায়  চিরদিনের জন্য । কিন্তু জীবনের পিছনে আসে মানুষের শেষ পরিনতি, মৃত্যু। মৃত্যু যেন মানুষের সব আশা স্বপ্নকে মিথ্যে করে দিতে চায়। মানুষ বাঁচতে চায় পৃথিবীতে । ভালোবেসে পরিতৃপ্ত হতে চায় । মানুষের বাঁচার এই চিরন্তন প্রচেষ্টাই জীবনের লক্ষণ । জীবন মৃত্যুর মাঝে রয়েছে মানুষের ভালোবাসা, চিরন্তন আশান্বিত প্রেম । যা মৃত্যুকে অতিক্রম করতে পারে।।"

আশা করি গল্পের ভূমিকায় লেখা এই লাইনগুলিই যথেষ্ট গল্প সম্পর্কে বলার জন্য । তবুও আরো নির্দিষ্ট করে যদি বলতে হয় বলবো পুরো গল্পটি যেন একটি ভাব-সম্প্রসারণ বিভিন্ন অর্থে এই লাইনটির-

"খাঁচার ভিতর অচিন পাখী কেমনে আসে যায়।

ধরতে পারলে মন-বেড়ী দিতাম তাহার পায়।।"

আর লেখক সম্পর্কে বলব, শক্তিপদ রাজগুরু চিরকালই ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙালির মাথা উঁচু করে বাঁচার গল্প লিখে গেছেন এই গল্পটি ও তার ব্যতিক্রম নয়।।

একটা সময় ছিল, যখন বাড়িতে নতুন অতিথিরা আসতো খুব আনন্দ হতো; আবার তারা যখন চলে যেত - মন খারাপ হয়ে যেত। কিন্তু সময়ের নিয়মে আমরা এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি, যেখানে কেউ যদি 'ছেড়ে যায়' আর মন খারাপ হয় না, 'ছেড়ে যাওয়া' গুলো আর ভাবায় না, বরং এই 'ছেড়ে যাওয়া'টাই যেন 'স্বাভাবিক' মনে হয়। তবুও 'ছেড়ে যাওয়া'র এই 'আধুনিক আপেক্ষিকতা'কে উপেক্ষা করেও বরং যারা 'থেকে যায়' এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত অব্দি পাশে 'থেকে যাওয়া'র দৃঢ় অঙ্গীকার বদ্ধ হয়, তারাই যেন 'অস্বাভাবিক', 'ব্যতিক্রমী'!  'অসামান্যা', যেন 'চিরন্তনী', যেন "Special One" .... 

 হাজারটা 'ছেড়ে যাওয়া'র গল্পও যেন একটা 'থেকে যাওয়া' বাস্তবের কাছে ফিকে ।

এরকমই একটা থেকে যাবার গল্প 'অচিন পাখি'..........

তবু যখন মনে হয় সব কাজ শেষ হয়েছে, এবার একটু পাশে বসে শান্ত প্রাণে মনের ভিতর আশ্রয় খুঁজে নেবার পালা, ঠিক তখনি জানি না কেন, কোন অমোঘ আদেশে সময়ের নিয়মেই ছেড়ে যেতে হয় চিরকালের জন্য।